সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
রবিবার ● ১৬ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » ফেসবুক বাগানে সাপ !!!
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » ফেসবুক বাগানে সাপ !!!
৫০৭ বার পঠিত
রবিবার ● ১৬ জুন ২০১৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ফেসবুক বাগানে সাপ !!!

ফেসবুক বাগানে সাপ !!!যার কেউ নেই, তার নাকি ফেসবুক আছে। কিন্তু ফেসবুকের একা মানুষটিকেও সঙ্গ দেবে এক অদৃশ্য অনুসরণকারী। এক সর্বদর্শী চোখ সেখানেও দেখবে আপনার ইনবক্স, চ্যাটিং বা মেইল। জানবে কী সার্চ দিচ্ছেন আপনি গুগলে? আপনার বন্ধুরা কারা? দুনিয়াটাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভেবে আপনি চোখ ডুবিয়ে রাখবেন ডিজিটাল স্রোতে, তা হওয়ার নয়। আপনার প্রতিটি ক্লিক কেউ টিক দিয়ে রাখছে, আপনার অনলাইন গতিবিধি টুকে রাখছে। তা থেকে আপনার মনের মতিগতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। মুনকার-নকিরের মতো তারা লিখছে আপনার আমলনামা। এই আমলনামার একটি কপি চলে যাচ্ছে পণ্যবিক্রেতাদের কাছে; আরেকটি কপি থাকছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে। এসব থেকে যার যেমন ঝোঁক, কোম্পানিগুলো তার কাছে সেই পণ্যের হাতছানি পাঠায়; তেমনি যার যেমন ঝোঁক, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সেভাবেই তাকে নজরে রাখে বা টোপ দিয়ে ধরে। সিসিটিভি যেমন রাস্তায় আপনাকে শৃঙ্খলা মানা নাগরিক হতে চাপ দেয়, সুপার মার্কেটে সুবোধ ক্রেতা বানিয়ে রাখে; অনলাইন নজরদারি তেমনি আপনাকে করে রাখতে চায় জি-হুজুর মার্কা মানুষ। প্রস্তাবিত সন্ত্রাস দমন আইনে ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ তথা অনলাইন যোগাযোগের তাবৎ মাধ্যমকেই নজরবন্দী করার বৈধতা দিয়েছে।পদ্ধতিটা প্রায় ঐশ্বরিক। ধার্মিক ব্যক্তি যেমন সবকিছুর পেছনেই সৃষ্টিকর্তার নজর টের পান বলে গোপন পাপটি নিয়েও ভয়ে থাকেন, তেমনি নাগরিকেরা এই সর্বদর্শী চক্ষুর ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবেন। আজকের মানুষের জীবন দুভাবে বিভক্ত: অফলাইন আর অনলাইন। একদিকে অফলাইনের মাটির দুনিয়ায় সিসিটিভির নজরদারি; অন্যদিকে অনলাইনের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় চলবে ‘ডিজিটাল ঈশ্বরের’ নজরদারি। অনলাইন-জগৎকে এ রকম ঐশ্বরিক চক্ষুর অধীনে রাখার ইচ্ছা যাঁদের, তাঁরা চান মানুষ অদৃশ্য সেই চক্ষুর ভয়ে বশে থাক। সরাসরি পুলিশি বাড়াবাড়ি না করেও একসঙ্গে জনগণের বিরাট অংশকে পুলিশি নজরাধীন রাখার এই পদ্ধতি মসৃণও বটে, সস্তাও বটে। ড্রোন যেমন মনুষ্যহীন যুদ্ধ করে, অনলাইন নজরদারি তেমনি করবে ডিজিটাল খানাতল্লাশি।
সেই তল্লাশিতে যদি ধরা পড়ে আপনার মনে গোপন অসন্তোষ আছে, তাহলে আপনার নামে তৈরি করা ইলেকট্রনিক ফাইলটায় লাল দাগ পড়বে। আপনার মতো আর যারা আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট ধরে, তারাও হবে ‘সন্দেহভাজন’ গোষ্ঠী। কিছু করেন বা না করেন, আপনি বাড়তি ভোগান্তিতে পড়বেন; পুলিশি হয়রানি-ব্যবসার নতুন পথ খুলে যাবে। পরিণামে আপনারই নিরাপত্তার নামে তৈরি করা নিরাপত্তাজালে আটকা পড়বে আপনার স্বাভাবিক চলন-বলন, নাগরিক মতপ্রকাশ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার। প্রস্তাবিত সন্ত্রাস দমন (সংশোধিত) আইনে এই বন্দোবস্তই করা হচ্ছে।

আইনের ২১(৩) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সত্তা কর্তৃক ব্যবহূত ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটার বা যে কোন ইন্টারনেট-এর মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা তাহাদের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট স্থির বা ভিডিওচিত্র পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক কোন মামলার তদন্তের স্বার্থে যদি আদালতে উপস্থাপন করা হয়, তাহা হইলে সাক্ষ্য আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক উপস্থাপিত উক্ত তথ্যাদি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হইবে।’
যা আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হতে পারবে, তা মিলবে কীভাবে যদি আগে থেকেই নজরদারি করা না হয়? যে কারও ফোনে আড়ি পাতার অধিকার নিরাপত্তা সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে। সে সময় এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করা হলেও এখনো রুল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। পাশাপাশি ইন্টারনেটে নজরদারির দরজাও অবারিত ছিল। এই নজরদারি দুভাবে করা যায়: আপনার অনলাইন কথাবার্তায় আড়ি পেতে অথবা গুগল-ফেসবুক-টুইটারের মতো সংস্থার কেন্দ্রীয় ডেটাবেইস থেকে জেনে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ফোন ও অনলাইন যোগাযোগে আড়ি পাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। জাতিসংঘও উদ্বিগ্ন যে, বিশ্বের দেশে দেশে আড়ি পাতার মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আইনের রূপরেখা দেখে উদ্বেগ জানিয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থের কথা বলে যে কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভাঙার অধিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া থাকলেও সেগুলোর ব্যবহার হতো ব্যক্তি সম্পর্কে জানার জন্য, আদালতে অপরাধী প্রমাণের জন্য নয়। কিন্তু নতুন আইনে সেই অধিকারও তারা পেল। এর বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যে ক্ষমতা মজুত হবে, তাতে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন আরও মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা প্রকট। নাগরিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার আর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মধ্যে যে পাতলা পর্দা ছিল, সেটাও ছিঁড়ে যাবে। কারও গোপন প্রেমালাপ, ব্যক্তিগত কান্নার সংলাপও নজরাধীন হবে। কারও কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা ছাড়াই মনের ক্ষোভ প্রকাশ সম্ভাব্য ‘সন্ত্রাসমূলক’ আচরণ বলে গণ্য হবে।
বিশ্বব্যাপীই ইলেকট্রনিক যোগাযোগমাধ্যমকে ‘সন্ত্রাসের সহযোগী বা হাতিয়ার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রায় নয় কোটি মানুষ, আর ইন্টারনেটে যুক্ত আছে তিন কোটিরও বেশি ডিভাইস। নতুন আইনের অন্তর্নিহিত দর্শন হচ্ছে, এই কোটি কোটি মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার সন্ত্রাসের সম্ভাব্য হাতিয়ার। অতএব তাদের নজরবন্দী করো। বাস্তবে বা রিয়েল লাইফে এ পরিমাণ নজরদারি এখনো চাপানো না হলেও অনলাইন বা ভার্চুয়াল পরিসরে সেটা চাপানো হচ্ছে কেন? কারণ, ওই বদ্ধবিশ্বাস যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ-প্রযুক্তি সন্ত্রাস-নাশকতার হাতিয়ার। চোর গাড়িতে পালায় বলে প্রতিটি গাড়ি তল্লাশির মতো এই নজরদারিও কেবল আহাম্মকিই নয়, হঠকারী। ভার্চুয়ালকে এভাবে রিয়েলের থেকেও বেশি বিপজ্জনক গণ্য করা হচ্ছে, তাকে ভাবা হচ্ছে বাস্তবের ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাম; যা দিয়ে সমাজ মনস্তত্ত্ব থেকে শুরু করে ব্যক্তির মনের চিন্তাভাবনার ওপর পুলিশগিরি করা যাবে। এর পেছনে রাষ্ট্রক্ষমতার মনে রয়েছে এক দুর্মর ক্ষমতাবাসনা। এই গুপ্তজ্ঞানের প্রতি তৃষ্ণার গোড়া রয়েছে জনগণকে ‘নিয়ন্ত্রণের’ ইচ্ছা। সে জন্যই প্রত্যেকের পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়ে দেওয়ার কায়দায় প্রত্যেকের অনলাইন গতিবিধি ‘ট্র্যাক’ করার এই আয়োজন। অনলাইনকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অফলাইন তথা মাটির দুনিয়ার চলাফেরাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে তাদের বিশ্বাস।

মহাযুদ্ধ, মহাসন্ত্রাস আর মহামারি-ভাইরাসে বিপর্যস্ত আধুনিক মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই ফাউস্টিয় অফার যে, যদি তুমি নিরাপত্তা চাও, তাহলে স্বাধীনতা পাবে না। ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ বাধ্য হয়ে স্বাধীনতার মূল্যে নিরাপত্তা পাবে বলে আশা করে। আক্ষরিক অর্থেই নিরাপত্তা ব্যবসা এখন পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যবসাগুলোর একটি। অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি আছে, যারা তাদের অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারের বিক্রি বাড়ানোর জন্য নিজেরাই ছড়ায় কম্পিউটার ভাইরাস। অনেক রাষ্ট্র আছে, যারা সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী পয়দা করে তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অনন্তকাল চালানোর জন্য।

সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি যুবক নাফিস, বোস্টন বোমারু বলে অভিযুক্ত দুই ভাই এবং লন্ডনে সেনাসদস্যের ওপর ছুরি চালানো কেনীয় যুবকের ঘটনায় দেখা গেছে, এই পাঁচজনই কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে বা ব্যবহারের মধ্যে ছিল। তাই বাংলাদেশে যখন অনলাইন নজরদারি সর্বব্যাপী করা হচ্ছে, তখন এই প্রশ্ন আমাদের তুলতেই হবে যে, ১. এটা যে সন্ত্রাসের বৃদ্ধিতে ব্যবহূত হবে না তার নিশ্চয়তা কী? ২. খুব সহজেই যেখানে হ্যাক করা যায়, সেখানে হ্যাকিং বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রমাণ তৈরি করে ভিন্নমতাবলম্বীদের নিপীড়ন করা হবে না তো? ৩. ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ বৈধ করায় যে কেউই তো যে কাউকে হয়রানির জন্য যার-তার ফেসবুক বা মেইলে হ্যাক করে তার ক্ষতির চেষ্টা করতে পারে? ৪. মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রমাণ যত দিন না আদালতে প্রমাণিত হবে, তত দিন ‘অভিযুক্ত’ জামিন অযোগ্যভাবে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হলে কী হবে? ৫. নিছক অনলাইনে মতপ্রকাশ বা প্রতিবাদকে সন্ত্রাসে উসকানি বা সহায়তা বলে চিহ্নিত করার পরিবেশে মতপ্রকাশের অধিকার বলে আর কিছু থাকবে কি?
সমাজে মানুষের নড়াচড়া, ভাবা-কওয়া এসবের সুযোগ থাকতেই হবে। এসবই সমাজের অক্সিজেন। এসব ছাড়া সমাজ জীবিত থাকবে না। তৈরি হবে হলিউডের ম্যাট্রিক্স ফিল্মের মতো এক জগৎ, যেখানে মানুষের মগজেই বসবে উপনিবেশ; অথচ সে জানতেও পারবে না যে সে বন্দী। যে মানুষের নড়াচড়া, শ্বাস-ঘাত নেই, সেই মানুষ বাঁচা মানুষ, না মরা মানুষ। যে সমাজে কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়ার মতো সর্বদর্শী পাহারাদার নিযুক্ত হয়, সেই সমাজে মানুষের মন দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। দোরে-দোকানে মানুষ কথা বলবেই, ঘরের মধ্যে মানুষ চিন্তা করবেই। এসবের কোনোটা দাগের বাইরে চলে গেলেই তার জন্য সাত থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তো হিটলারি শাসনেও সম্ভব ছিল না। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের কথা বলেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙা হয়েছিল, অথচ আজকের দুনিয়া যা করছে, সোভিয়েত শাসন তা কল্পনাও করেনি।
এক হাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের ইশতেহার আর আরেক হাতে প্রস্তাবিত সন্ত্রাস দমন আইন নিয়ে ভাবছি, কোন হাত সত্য? কোনটা বিজ্ঞাপন আর কোনটা তার পরিহাস?

ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
farukwasif@yahoo.com



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের রাজস্ব আয় ৩৯৩২.৯ কোটি টাকা
নতুন দামে টেকনো স্পার্ক২০সি
টেন মিনিট স্কুলের কোর্স ফি-তে বিকাশ পেমেন্টে ২০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক
গ্রাহকদের নজর কেড়েছে ইনফিনিক্সের নতুন ল্যাপটপ ইনবুক ওয়াইটু প্লাস
রবি’র ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
বিসিএস এর উদ্যোগে মাদারবোর্ড সারানোর ৮ দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের প্রশিক্ষণ কর্মশালা
সফটওয়্যার ও স্টার্টআপ খাতের উদ্যোগ হুমকির মুখে
জাপান আইটি উইকে বেসিস ও বাক্কো
থাইল্যান্ডে ইউএন এসকাপ-এর ৮০তম সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্বে প্রতিমন্ত্রী পলক
আইসিসি টুর্নামেন্টের ডিজিটাল সম্প্রচার স্বত্ব পেল টফি