সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
রবিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » গুগলের হাতেই কি রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার?
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » গুগলের হাতেই কি রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার?
৬১৯ বার পঠিত
রবিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গুগলের হাতেই কি রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার?

কোয়ান্টাম কম্পিউটার
বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বের একটি বহুল আলোচিত শব্দ হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বলা হয়ে থাকে-এই কম্পিউটারের নাগাল যে বা যারা পাবে, তারাই পুরো বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হবে। সম্প্রতি ফাঁস হয়ে যাওয়া এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, গুগল এরই মধ্যে তৈরি করে ফেলেছ কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তবে কি গুগলের হাতেই সত্যিই সেই ‘ভয়ংকর’ কম্পিউটার?
ঘটনার শুরু চলতি মাসেই। এত দিন ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট নানা গবেষণা ও বিভিন্ন টেক জায়ান্টদের প্রতিযোগিতার ইঁদুরদৌড় নিয়ে মেতে থাকত প্রযুক্তি বিশ্ব। কিন্তু ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। এখন মনে করা হচ্ছে, শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল সবার আগে পেয়ে গেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাগাল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণা দেয়নি গুগল। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনো মন্তব্যও করেনি। আবার অস্বীকারও করেনি।

ফোর্বসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গুগলের গবেষক দলের তৈরি একটি গবেষণাপত্র যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। পরে সেটি আবার ওয়েবসাইট থেকে সরিয়েও নেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভুলক্রমে ওই গবেষণাপত্রটি আপলোড করা হয়েছিল। তবে সেই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই অনেকে গবেষণাপত্রটি পড়ে ফেলতে বা ডাউনলোড করে ফেলেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফাঁস হয়ে যাওয়া এই গবেষণাপত্রটি চূড়ান্ত নয়, খসড়া। ধারণা করা হচ্ছে, গবেষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে এই খসড়াটি তৈরি করা হয়েছিল। পরে ভুলক্রমে তা প্রকাশ হয়ে গেছে।

ওয়্যারড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুগলের ওই গবেষণাপত্রে ‘কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি’ অর্জনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। সংশ্লিষ্ট মূল গবেষণাকর্মটি এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার, তবে তা এখনো প্রকাশিত হয়নি। ফাঁস হওয়া গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে যে, গবেষকেরা তাঁদের আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে একটি বিশেষ গাণিতিক সমস্যার সমাধান মাত্র তিন মিনিটে করতে পেরেছেন। অথচ বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার দিয়ে ওই একই গাণিতিক সমস্যার পূর্ণ সমাধান করতে সময় লাগবে প্রায় ১০ হাজার বছর। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং করতে সক্ষম ‘সেকামোর’ নামের একটি বিশেষ চিপ ব্যবহার করেছে গুগল, যাতে আছে ৫৩ কিউবিটস (কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মৌলিক একক)। প্রথাগত কম্পিউটার বিটসের চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজ করতে পারে কিউবিটস।

প্রশ্ন হলো, কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি কী? বর্তমানের সাধারণ কম্পিউটারের সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল পার্থক্য হলো-কোয়ান্টাম মেকানিজমের জটিল অনেক সমস্যার সমাধান কোয়ান্টাম কম্পিউটার এক তুড়িতে করে ফেলতে পারে। ওই একই সমস্যার সমাধান করতে হালের সর্বাধুনিক কম্পিউটারের লেগে যায় শত থেকে হাজার হাজার বছর। এই বিষয়টিকেই বলা হয়ে থাকে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি। অর্থাৎ যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ ওই সব জটিল সমস্যার সমাধান অত্যন্ত কম সময়ে করতে পারবে, তখনই বলা হবে যে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই গুগলের অর্জনকে অভাবনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ফাঁস হয়ে যাওয়া গবেষণাপত্র অনুযায়ী বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করতে পেরেছে। অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছরেই গুগল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে।

আসুন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আদ্যোপান্ত। বাইনারি পদ্ধতিতে সংখ্যা মাত্র দুটি: ০ ও ১। এই বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি দিয়ে সব ধরনের কাজ সারে এখনকার কম্পিউটার। তবে একই সঙ্গে ০ ও ১-এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। এই জায়গাতেই এগিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ০ ও ১-দুটিরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আবার একই সময়ে একই সঙ্গে ০ ও ১-এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। দুর্বোধ্য ও জটিল কোয়ান্টাম মেকানিকসের সুপারপজিশন ও এনট্যাংগেলমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করে এই কম্পিউটার।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা অনেক। খুব বেশিসংখ্যক গাণিতিক সমস্যার সমাধান এটি করে না। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রথাগত কম্পিউটার যে অল্পসংখ্যক জটিল সমস্যার সমাধান করতে গলদঘর্ম হয়ে পড়ে, সেসব সমস্যার সমাধান এক লহমায় করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ফলে ওষুধশিল্প থেকে শুরু করে তেলশিল্প-সবখানেই বিপ্লব আনতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান দ্রুত করে ফেলা যাবে। তৈরি হবে নতুন নতুন ওষুধ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক অ্যালগরিদম আরও উন্নত করা যাবে। এমনকি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক রূপ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, সেটিও সহসাই উন্নত করে ফেলা যাবে।
ঝুঁকিও আছে ঢের। যদি উন্নত কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়েই যায়, তবে হুট করেই বর্তমানের প্রচলিত ইন্টারনেটের যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকবে, সেটি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারবে। কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য নিজেদের থলেতে নেওয়া যাবে। হ্যাক করা যাবে সরকারি ডেটাবেইস। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে। চাইলে অচল করে দেওয়া যাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে অনেকে একে ‘ভয়ংকর’ কম্পিউটার বলতেও দ্বিধা করেন না।

অবশ্য এখনো ততটা উন্নত কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাগাল পায়নি গুগল। অন্তত গবেষকেরা তেমনই ধারণা করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, গুগল প্রাথমিক মানের একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়তো তৈরি করতে পেরেছে। আর যে জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারার কথা বলা হয়েছে, সেটির প্রায়োগিক উপকারিতা তেমন নেই। অর্থাৎ ব্যবহারিকভাবে কর্মক্ষম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি এখনো বহু দূরের পথ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গুগল সবার আগে এবং সর্বপ্রথম এর নাগাল পেয়েছে। অর্থাৎ এত দিন যে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ‘অলীক’ বস্তু বলে মনে করা হতো, তা আর থাকছে না। বরং বাস্তবের কঠিন জমিনে দাঁড়িয়েই শুরু হবে নতুন যাত্রা। এই বিষয়টিকে মহাকাশে পাঠানো প্রথম কার্যকর কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে তুলনা করলে বুঝতে সহজ হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের এসব উপগ্রহ হয়তো অনেক তথ্য পাঠাতে পারত না, কিন্তু ওই সময়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘোরাটাও ছিল একটি বিশাল অর্জন। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে গুগল ঠিক তেমন সফলতাই পেয়েছে।

অবশ্য কোনো কোনো গবেষক বলছেন, কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন ‘সুপ্রিম’ কোনো বিষয় নয়। কারণ প্রযুক্তির জগৎ নিয়ত পরিবর্তনশীল। আজ যা চরম উৎকর্ষের বিষয়, কালই তা সেকেলে হয়ে যেতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান আইবিএম তো বলেই দিয়েছে যে, গুগল নাকি কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসির কথা বলে এ সংক্রান্ত পুরো গবেষণাকেই ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার-সংক্রান্ত গবেষণায় গত কয়েক বছর ধরেই এন্তার বিনিয়োগ হচ্ছে। শত শত কোটি ডলার এ খাতে খরচ করা হচ্ছিল। গুগলের সাম্প্রতিক সাফল্য সেই ব্যয়ের খাতকে বৈধতা দিয়েছে। এত দিন এক কাল্পনিক সোনার হরিণের পেছনে ছুটছিল সবাই। তবে এখন জানা গেল, সোনার হরিণ সত্যিই আছে!



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের রাজস্ব আয় ৩৯৩২.৯ কোটি টাকা
নতুন দামে টেকনো স্পার্ক২০সি
টেন মিনিট স্কুলের কোর্স ফি-তে বিকাশ পেমেন্টে ২০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক
গ্রাহকদের নজর কেড়েছে ইনফিনিক্সের নতুন ল্যাপটপ ইনবুক ওয়াইটু প্লাস
রবি’র ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
বিসিএস এর উদ্যোগে মাদারবোর্ড সারানোর ৮ দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের প্রশিক্ষণ কর্মশালা
সফটওয়্যার ও স্টার্টআপ খাতের উদ্যোগ হুমকির মুখে
জাপান আইটি উইকে বেসিস ও বাক্কো
থাইল্যান্ডে ইউএন এসকাপ-এর ৮০তম সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্বে প্রতিমন্ত্রী পলক
আইসিসি টুর্নামেন্টের ডিজিটাল সম্প্রচার স্বত্ব পেল টফি