
বুধবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » শেষ হলো দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের তিন দিনব্যাপী কর্মশালা
শেষ হলো দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের তিন দিনব্যাপী কর্মশালা
ফাইভজি, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টারনেট অব থিংস এর মত উদীয়মান প্রযুক্তির যুগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের চ্যালেঞ্জ, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল সুরক্ষা, ভবিষ্যত ট্যারিফ নীতিমালা গঠন, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি পরিষেবার প্রভাব বিশ্লেষণ এবং ডিজিটাল রূপান্তরের কৌশল ও করণীয় বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ৯টি দেশের নিয়ন্ত্রকসংস্থাসমূহের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পলিসি, রেগুলেশন ও সেবা সংক্রান্ত তিন দিনব্যাপী কর্মশালা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর আয়োজনে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ১০টি সেশনে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ৪০টি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
৩০ এপ্রিল সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী (অব.) অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সংস্কৃৃতিগত দিক থেকে মিল রয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে কানেক্টিভিটি গ্যাপ এবং ইন্টারনেট ব্যবহার গ্যাপ কমিয়ে আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ইন্টারনেট কেবল বিনোদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, ফলে ইন্টারনেটের ফলপ্রসু ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল সেবার সম্প্রসারণ করতে হবে। কর্মশালা আয়োজনে বাংলাদেশকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি (এপিটি) এর প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটির (এপিটি) মহাসচিব মাসানরি কুন্ডু সুষ্ঠুভাবে কর্মশালা আয়োজনের জন্য বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্য ভবিষ্যত পলিসি প্রণয়ন ও উদ্ভূত সমস্যার সৃজনশীল সমাধান নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রথম দিনে বিভিন্ন সেশনে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির যুগে রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর চ্যালেঞ্জ, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের যথাযথ ব্যবহার এবং ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় দিনে ডিজিটাল গ্রাহকদের সুরক্ষা: অনলাইন স্ক্যাম এবং আর্থিক জালিয়াতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা; ভবিষ্যত ট্যারিফ নীতিমালা গঠন: উদীয়মান টেলিযোগাযোগ/আইসিটি পরিষেবার প্রভাব নিয়ে সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আলোচকরা বলেন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন গ্রাহকের জন্য অভূতপূর্ব সুযোগের পাশপাশি অনলাইন স্ক্যাম ও ডিজিটাল আর্থিক জালিয়াতির মত নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে। ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ^ব্যাপী সাইবার অপরাধের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে ১০.৫ ট্রিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে তারা বলেন, এই সমস্যা মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং খাতসংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের গ্রাহক সুরক্ষা কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে।
ট্যারিফ পলিসি সংক্রান্ত সেশনে আলোচকরা বলেন, গত দশকে দক্ষিণ এশীয়ার দেশগুলোতে সার্কিটভিত্তিক নেটওয়ার্ক থেকে আইপিভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তর টেলিযোগাযোগ ল্যান্ডস্কেপকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে। এর ফলে নেটওয়ার্ক টপোলজি এবং পরিষেবা সরবরাহে বিপ্লব আনার পাশাপাশি মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং শুল্ক নির্ধারণ পদ্ধতিতেও নতুন চ্যালেঞ্জের সূচনা করেছে। আইওটি ও বিগ ডেটার মত প্রযুক্তি নিয়ে আলোচকরা বলেন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা এবং অনুরূপ উদীয়মান প্রযুক্তি শহর-গ্রাম উভয় ক্ষেত্রে স্মার্ট অবকাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তৃতীয় দিনে নেট নিরপেক্ষতা এবং ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে ডিজিটাল রূপান্তর, আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি এবং নাগরিক পরিষেবা উন্নত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, এর জন্য শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং একটি ঐক্যবদ্ধ বহুমুখী কৌশল ও আঞ্চলিক পলিসি গ্রহণ প্রয়োজন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথোরিটির সদস্য ও এসএটিআরসি ওয়ার্কশপ অন পলিসি, রেগুলেশন এন্ড সার্ভিসেস-এর সভাপতি ড. খাওয়ার সিদ্দিক খোকার, বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদসহ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও ইরানের রেগুলেটরি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, টেলিকম অপারেটর, টেলিকম বিশেষজ্ঞগণ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।