
বুধবার ● ১৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » বাংলাদেশে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২৫ উদযাপিত
বাংলাদেশে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২৫ উদযাপিত
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২৫ উদযাপন করা হয়েছে। এই দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে গত ১৫ জুলাই ঢাকাস্থ বিনিয়োগ ভবনে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) কর্তৃক এক বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইউনেস্কো-ইউনিভোক কর্তৃক এই দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে যুবদের ক্ষমতায়ন’। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল স্কিলস পোর্টালে ‘লাইভ জব অপরচুনিটি’ প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর চূড়ান্ত বাছাইয়ে ৯টি স্কিলে ১১জন বিজয়ীর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে দিবসের প্রতিপাদ্যের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মোসাদ্দেক খান। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ জহুরুল হক এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ ওবায়দুর রহমান প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আগামীর বাংলাদেশ বির্নিমাণে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা তরুণদের শুধু চাকুরি নয়, বরং উদ্যোক্তা মানসিকতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত। আমাদের জনসংখ্যার বড় অংশ এখন তরুণ। এটা কোন জাতির জীবনে বিরল ঘটনা, খুব কম জাতির জীবনেই এটা হয়েছে। আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সূবর্ণ সময় এখন।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে যে নতুন দুনিয়া তৈরি হয়েছে, সেখানে নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি হচ্ছে। এই নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণদের সক্ষমতা অর্জন করে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর যেই দেশের যুব শক্তি দক্ষতা অর্জন করেছে তারাই এগিয়ে গেছে। একাডেমিয়া, শিল্প প্রতিষ্ঠান, এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় যদি আমরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত সমাধান বের করতে পারি এবং তরুণদের সাথে নিয়ে আগামীর পথ রচনা করতে পারি, তাহলে আমরা সফল হবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া সচিব মোঃ মাহবুব-উল-আলম বলেন, দক্ষতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় করে একটি সমন্বিত স্কিলস ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনপ্রিয় থ্রীপল হেলিক্স মডেলের (সরকার, একাডেমিয়া ও ব্যবসা) উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ‘হোল অব গভর্ণমেন্ট’ প্রসেসকে কাজে লাগিয়ে তরুণদের সক্ষমতায় আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। যুব ও ক্রীড়া সচিব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতায় তরুণদের সক্ষমতা অর্জনের আহ্বান জানান।
মানুষের যাপিত জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাবের বিষয় উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও এনএসডিএ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান রেহানা পারভীন বলেন, আমাদের শেখার পদ্ধতি, কাজের ধারাসহ সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন আসছে। চ্যালেঞ্জের জায়গাটা হলো এ পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য সকলকে সমানভাবে প্রস্তুত করে তোলা। তিনি বলেন, বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসে ইউনেস্কো-ইউনিভোকের তথ্য মতে-২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এআই ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। অথচ বিশ্বের ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনও এআইভিত্তিক কাজের জন্য প্রস্তুত নয়। স্বল্প আয়ের দেশসমূহে ৯০ শতাংশ কিশোর কিশোরী ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে আছে। এআই এর প্রভাব সর্বব্যাপী হলেও এ বিষয়ে সকলের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। সকলের জন্য ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করার যে লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে চাই তা অনেকটাই ঝুকিঁর মধ্যে পড়ে যাবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা ২০২৬ সালে চীনের সাংহাইএ অনুষ্ঠিতব্য ‘ওয়ার্ল্ড স্কিলস’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। এনএসডিএ তাদের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ সভায় বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং যুবদের জন্য অধিকতর আর্থ-সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর জুলাই মাসের ১৫ তারিখকে ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিবছর ১৫ জুলাই সারাবিশ্বে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এনএসডিএ-এর সদস্য (সমন্বয় ও অ্যাসেসমেন্ট) ও যুগ্মসচিব মো. আব্দুস সামাদ, সদস্য (পরিকল্পনা ও দক্ষতামান) ও যুগ্মসচিব মিনা মাসুদ উজজামান এবং শিল্প দক্ষতা পরিষদ (আইএসসি), সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ ও এনএসডিএ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।