সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, অক্টোবর ২১, ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
বুধবার ● ২২ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » স্যামসাংয়ের পৌষ মাস, হুয়াওয়ের সর্বনাশ
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » স্যামসাংয়ের পৌষ মাস, হুয়াওয়ের সর্বনাশ
৯৫০ বার পঠিত
বুধবার ● ২২ মে ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্যামসাংয়ের পৌষ মাস, হুয়াওয়ের সর্বনাশ

প্রতিকী ছবি
হুয়াওয়ের ফোনে গুগলের সেবা পাওয়া যাবে না! তাহলে ক্রেতারা কি আর হুয়াওয়েমুখী হবে? স্মার্টফোনের বাজারে তরতর করে এগিয়ে চলা হুয়াওয়ের জন্য এটি বড় ধাক্কা হয়ে আসতে পারে। তবে এটি আবার দারুণ সুযোগ হয়ে আসতে পারে স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাং, শাওমি ও অপোর জন্য।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা এখন হুয়াওয়ে। স্যামসাংয়ের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ও গুগলের সুবিধা না পেলে বৈশ্বিক বাজারে হুয়াওয়ে ফোনের বিক্রি কমে যাবে। এ সুযোগে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বাজার ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং।

গত রোববার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে হুয়াওয়ের জন্য প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয়। হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান চীনের এ বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে। সম্প্রতি হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র এমন কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত করেছে, যার সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এরপরই গুগল তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

গুগল জানায়, তারা আদেশ মেনেই কাজ করছে এবং এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে। গুগলের নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে হুয়াওয়ে গুগলের নিরাপত্তাবিষয়ক আপডেট ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আর পাবে না। তবে ‘ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম’-এ থাকা সফটওয়্যারগুলোই শুধু সচল থাকবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনগুলোয়।
হুয়াওয়ের জন্য সুখের কথা হলো, তাদের ওপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ সাময়িক শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে হুয়াওয়ের গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে এ শিথিলতা দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ থেকে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসকে বর্তমান হুয়াওয়ে হ্যান্ডসেটগুলোর জন্য বিদ্যমান নেটওয়ার্ক ও সফটওয়্যার আপডেটের সুবিধার্থে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য কেনার সুযোগ দেবে। তবে নতুন স্মার্টফোন তৈরিতে লাইসেন্স অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তৈরি যন্ত্রাংশ কেনার অনুমতি দেবে না।

গুগলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে অবশ্য হুয়াওয়ে নতুন আশ্বাস দিচ্ছে। এ ঘটনার পর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে হুয়াওয়ের প্রতিনিধি আব্রাহাম লিউ বলেন, ‘হুয়াওয়েকে সেবা বন্ধ করার ইচ্ছা গুগলের নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের সিদ্ধান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও তার প্রভাব সামলাতে আমরা গুগলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, গুগলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হলে হুয়াওয়ে গুগলের জনপ্রিয় অ্যাপ ও সেবা-জিমেইল, ইউটিউব ও প্লেস্টোরের সুবিধা হারাবে। চীনের বাজারে গুগলের সেবা না থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ সেখানে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ। কিন্তু চীনের বাইরে এসব সেবা ফোনে না থাকলে ফোন কেনার আগে দুবার ভাববে মানুষ। এটা হুয়াওয়ের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। ২০১৮ সালে ২০ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে এনেছে হুয়াওয়ে, যার অর্ধেকই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে এসেছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির কর্মকর্তা ব্রায়ান মা বলেছেন, গুগলের সেবা না থাকলে হুয়াওয়ের নতুন সেটগুলো খেলনা হয়ে যাবে। গুগল অ্যাপস বাদে এগুলোর কার্যকারিতা কম। গুগল প্লে স্টোরের অন্য অ্যাপ পাবে না গ্রাহক।
বিশ্বের বৃহত্তম অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাং হুয়াওয়ে ফোনের দুর্দশার সুযোগ নিতে পারে। একইভাবে সুবিধা হতে পারে চীনা ব্র্যান্ড শাওমি ও অপোর ক্ষেত্রেও। ইউরোপের বাজারে সবচেয়ে বেশি লাভ খুঁজবে স্যামসাং-শাওমি-অপো। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শেষ তিন মাসে ইউরোপের বাজারের ২৫ শতাংশ দখল করে হুয়াওয়ে। ওই অঞ্চলে স্যামসাংকে প্রায় ধরে ফেলেছে হুয়াওয়ে। স্পেন, পোল্যান্ডসহ নয়টি দেশের বাজারে শীর্ষে চলে এসেছে হুয়াওয়ে।

হুয়াওয়ের দুর্দশার সবচেয়ে ভালো সুযোগ নিতে পারে শাওমি। যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞার ওপর নজর রাখছে তারা এবং একই সঙ্গে বাজার দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
ব্রায়ান বলেন, হুয়াওয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের পণ্য আছে স্যামসাংয়ের। হুয়াওয়ের বিকল্প হিসেবে বিশাল সুবিধা পেয়ে যাবে স্যামসাং। গত সপ্তাহ থেকে স্যামসাংয়ের শেয়ারের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনা রাষ্ট্রদূত গত সোমবার বলেছেন, হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার বদলা নিতে পারে চীন।

গতকাল মঙ্গলবার হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই বলেছেন, হুয়াওয়ের উত্থানের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে সংঘাতে আশঙ্কা করছিলেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে চীনের টুঁটি চেপে ধরতে চায়। সর্বোচ্চ ছাড় আদায় করাই তার লক্ষ্য। এদিকে চীন অ্যাপল পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।

চীন অ্যাপলের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। শেষমেশ বয়কট না করলেও অ্যাপলের পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণবিধি আরও কঠোর করতে পারে চীন। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে সাইবার চুরির অভিযোগ করলে চীনের মাইক্রোসফট কার্যালয় তল্লাশি করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে। বিদ্যমান নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও সফটওয়্যার হালনাগাদ দিতে হুয়াওয়ে মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে যন্ত্রাংশ কিনতে পারবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফল কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

হুয়াওয়ে কোন পথে যাবে?
এখন যাঁরা হুয়াওয়ের ফোন ব্যবহার করছেন, তাঁদের ডিভাইসে কোনো সমস্যা হবে না। তাঁদের স্মার্টফোনে গুগল প্লে স্টোর কাজ করবে বলে সোমবার নিশ্চিত করেছে গুগল।
অনেক গ্রাহক হুয়াওয়ে ফোন কেনার ক্ষেত্রে দ্বিধায় পড়ছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। সিঙ্গাপুরের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জার্মেইন ওং স্যামসাং এস৭ এজ বাদ দিয়ে হুয়াওয়ে পি৩০ কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় তিনি সিদ্ধান্ত বদল করছেন। ওং বলেন, ‘পি৩০ বা পি৩০ প্লাস কেনার কথা ভাবছিলাম। কারণ, এর ক্যামেরা ভালো এবং আমি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী। কিন্তু ভবিষ্যতে হুয়াওয়ে ফোনের ফাংশন নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম।’ স্মার্টফোন কেনার আগে আরেকটু দেখতে চান তিনি। হুয়াওয়ের বিকল্পগুলোর কথা ভাবছেন তিনি।

চলতি বছরের প্রথম তিনি মাসে বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের বাজারে ৫০ শতাংশ স্মার্টফোন প্রবৃদ্ধি হয়েছে হুয়াওয়ের, যা প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং ও অ্যাপলের চেয়ে কিছুটা বেশি। আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপল ও স্যামসাং ফোনের বিক্রি কমেছে। মিড রেঞ্জের স্মার্টফোনের বাজারে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতারা বৈশ্বিক ব্যবসা বাড়াতে জোর দিচ্ছে। এর মধ্যে শাওমি ও অপো হুয়াওয়ের দুর্দশার সুবিধা পাবে বেশি। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপের বাজারে চতুর্থ অবস্থান শাওমির। তারা বাজারে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শিউ শাও জি বলেছেন, গুগলের পদক্ষেপের ওপর তাঁরা দারুণ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে গুগলের পদক্ষেপে সরাসরি তাঁদের ওপর প্রভাব পড়বে না।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, গুগল ও হুয়াওয়ের সম্পর্ক নষ্ট হলে গুগলের ওপরেও প্রভাব পড়বে। কারণ, হুয়াওয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা। তারা স্মার্টফোন বিক্রি না করলে গুগলকেও ভুগতে হবে।
এর আগে গত মার্চ মাসে হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা অ্যান্ড্রয়েডের ওপর নির্ভরতা কমাতে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের জন্য নতুন ওএস তৈরি করছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সহযোগী পরিচালক তরুণ পাঠক বলেন, নিজস্ব ডিভাইসে নিজস্ব ওএস ব্যবস্থাপনা বিশাল কাজ। বিশেষ করে প্রিমিয়াম ফোনে প্রতিযোগিতা করতে গেলে বিশাল কাজ করতে হবে হুয়াওয়েকে।যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুয়াওয়ের ওপর এমন সময়ে আঘাত এসেছে, যখন স্যামসাংকে প্রায় ধরে ফেলার চেষ্টা করছে হুয়াওয়ে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের বাজার দ্রুত বাড়ছে। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের নিরবচ্ছিন্ন সেবা চান গ্রাহক। অ্যান্ড্রয়েড লাইসেন্স না থাকলে হুয়াওয়েকে এমন কিছু তৈরি করতে হবে, যা অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
ব্যবসায় এআই ইন্টিগ্রেশনে নতুন মাত্রা যোগ করতে এজেন্টফোর্স ৩৬০ আনল সেলসফোর্স
দেশের বাজারে শাওমি ব্ল্যাকশার্ক ব্র্যান্ডের প্যাড ৭ নিয়ে এলো টেকটাইম
দেশজুড়ে রিয়েলমি ১৫ ফাইভজি ও রিয়েলমি ১৫ প্রো ফাইভজি’র সেল শুরু
‘রোবট ফোন’ এর টিজার উন্মোচন করল অনার
টেলিকম সংযোগ শক্তিশালী করতে একসাথে কাজ করবে গ্রামীণফোন, টেলিটক ও ইডটকো
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন ‘মিস্টেরিয়াস এলিফ্যান্ট’ কার্যক্রম শনাক্ত করেছে ক্যাস্পারস্কি
এফআরপি টাওয়ার স্থাপন করলো ইডটকো
ডিজিটাল মাধ্যমে প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও বিমা দাবি নিষ্পত্তি করছে গার্ডিয়ান লাইফ
এশিয়া স্মার্ট ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ এ বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সফলতা
ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত হল সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালা