সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, মে ১৯, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
মঙ্গলবার ● ২১ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » হুয়াওয়ের ওপর এমন চাপ কেন?
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » হুয়াওয়ের ওপর এমন চাপ কেন?
৬১০ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২১ মে ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

হুয়াওয়ের ওপর এমন চাপ কেন?

---
অ্যাপল আর স্যামসাংয়ের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছিল হুয়াওয়ে। তরতর করে বাজার দখলে এগিয়ে চলছিল চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে গুগলসহ মার্কিন কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সেবা ও সুবিধা হারাতে হচ্ছে হুয়াওয়েকে। এর বড় প্রভাব পড়তে পারে হুয়াওয়ে-ভক্তদের ওপর। তবে গুগল প্লে স্টোরের অ্যাকসেস থাকা বর্তমান হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবহারকারীরা এখনো গুগলের অ্যাপ্লিকেশনের আপডেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েডের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ওএসের দিকে নজর দেওয়ার কথা বলছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। কিন্তু তাতে কি হুয়াওয়ে ফোন ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি আশ্বস্ত হতে পারছেন? হুয়াওয়ে ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে এক আতঙ্কের খবর হয়ে এসেছে এটি।

হুয়াওয়ের গ্লোবাল অফিসের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিস প্রথম আলোকে জানায়, হুয়াওয়ে এবং অনার ব্র্যান্ডের যেসব স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য পণ্য এখন বিশ্ববাজারে আছে বা ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট এবং বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করবে হুয়াওয়ে। বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে সব সময় একটি নিরাপদ ও টেকসই সফটওয়্যার ইকোসিস্টেম তৈরি অব্যাহত থাকবে।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়, এখন থেকে হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেট সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগল। এতে নতুন হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে গুগলের ইউটিউব, গুগল ম্যাপসের মতো অ্যাপগুলো আর থাকবে না।

সম্প্রতি হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র এমন কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত করেছে, যার সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এরপরই গুগল এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। গুগল জানায়, তারা আদেশ মেনেই কাজ করছে এবং এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে। গুগলের নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে হুয়াওয়ে গুগলের নিরাপত্তাবিষয়ক আপডেট ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আর পাবে না। তবে ‘ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম’-এ থাকা সফটওয়্যারগুলোই শুধু সচল থাকবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনগুলোয়।

হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে হুট করে এমন পদক্ষেপ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কিছুদিন ধরেই এমন পদক্ষেপ আসার ইঙ্গিত মিলছিল। গত ডিসেম্বর মাসে হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে গ্রেপ্তার করে কানাডা। দোষী সাব্যস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ওয়ানঝুর। হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানের সঙ্গে ব্যবসার অভিযোগ করা হয়।
মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে কানাডায় গ্রেপ্তারের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী রেন ঝেংফেই। তিনি বলেছেন, হুয়াওয়ে আর তাদের উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া বিশ্ব চলতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে ‘দমন’ করতে যত চেষ্টাই করুক না কেন, তাতে সফল হবে না।

বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই বলেন, ‘আমাদের দমন করার কোনো উপায় নেই যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্ব হুয়াওয়ে ছাড়া চলতে পারবে না। কেননা, আমাদের প্রযুক্তি অন্য সবার চেয়ে উন্নত।’নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর প্রতিক্রিয়ায় রেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মাথা নোয়াবেন না তিনি। ওয়াশিংটনের চাপ মোকাবিলা করতে তাঁরা প্রস্তুত। তাঁরা মার্কিন যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনবেন। ইতিমধ্যে তাঁরা এসব ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
কী প্রস্তুতি শুরু করেছে হুয়াওয়ে? ইতিমধ্যে হুয়াওয়ের থলে থেকে নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম ‘হংমেং’ বের হয়ে এসেছে। এর বাইরে নিজস্ব চিপ ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু করেছে চীন। চীনা এসব প্রযুক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত মাইক্রোচিপের বাজার দখল নিয়েই এ লড়াই। ডেটা বা তথ্যকে যদি আধুনিক যুগের তেল বলা হয়, তবে চিপকে বলা চলে ইঞ্জিন, যা ওই তেলকে উপযোগী করে তোলে। মাইক্রোচিপ নিয়েই এখন কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবে ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোয় চিপের চাহিদাও। এতে প্রসারিত হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসা বা চিপ নির্মাণ খাত। চিপ তৈরিতে এত দিন শুধু মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছে। কিন্তু এখন চিপের রাজ্যে হানা দিচ্ছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরু হয়ে গেছে ‘চিপযুদ্ধ’।
বিশ্বজুড়ে ২০১৭ সালে চিপের বাজার ছিল ৪১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের, যা ২০১৬ সালের চেয়ে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। চিপ নিয়ে বিশাল বৈশ্বিক শিল্প গড়ে উঠেছে।
চিপযুদ্ধ শুরুর অনেক কারণ আছে। প্রধান কারণ হচ্ছে কম্পিউটার চিপ এখন ডিজিটাল অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। এখনকার সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের দখল মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলোর হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এগিয়ে রয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিপের জন্য চীনকে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। তেল আমদানিতে চীনের যত ব্যয় হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই সেমিকন্ডাক্টর খাতটিকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে চীন।

২০১৪ সালে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সেমিকন্ডাক্টর খাতে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সালে একটি জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা পেশ করে দেশটি। চীনের এ ঘোষণায় সতর্ক হয় যুক্তরাষ্ট্র। চীনের উন্নত প্রযুক্তির শিল্প তৈরির লক্ষ্য আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন। ২০১৫ সালে চীনের বাজারে ইনটেলকে পণ্য বিক্রিতে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি, ২০১৬ সালে কোনো চীনা প্রতিষ্ঠান যাতে সহজে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও করা হয়। ওবামা আমলের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আরও শক্ত করে ট্রাম্প প্রশাসন।

চিপযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রযুক্তি বিশ্বে এখন দুটি পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একটি বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের উপলব্ধি। যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে যে তারা প্রযুক্তি উন্নয়নে চীনের চেয়ে এগিয়ে। তারা প্রয়োজনমতো বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বসাতে পারছে। এ ছাড়া সীমান্তে কড়াকড়ি করতে পারছে তারা। আরেকটি পরিবর্তন হচ্ছে চীনের স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা। সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভর হতে চীন সরকারের প্রণোদনা বেড়ে গেছে। জেডটিইর ঘটনার পরে দেশটির বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এরপর আলিবাবা, বাইদু ও হুয়াওয়ে চিপ তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চীন দেখিয়ে দিচ্ছে যে তারা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রুখে দিতে পারে।
হুয়াওয়ের উচ্চাভিলাষ ঠেকাতেই নতুন আঘাত হানল যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র এমন কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত করেছে, যার সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত হুয়াওয়ের ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমে হুয়াওয়ের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর বাদে ফোন কিনতে আগ্রহী হন না।
আসলে চীনা বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে বরাবরই হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আসছেন ট্রাম্প। গত বছর থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভজি সেবার কাজে হুয়াওয়েকে ‘নিষিদ্ধ’ও ঘোষণা করা হয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে টেলিকম নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা দেশগুলো। ফাইভজি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও। যুক্তরাজ্য প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে হুয়াওয়ে।

হুয়াওয়ের ওপর চাপ সহজে সরবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাই বিকল্প ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় করা শুরু করছে হুয়াওয়ে। কিন্তু এটা কতটা টেকসই হয়, তা দেখার বিষয়। সবার ওপরে গ্রাহক। তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলেই টিকে যাবে হুয়াওয়ে, তা না হলে মুদ্রার অপর পিঠ দেখতে হবে।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
ইমো ও জাগো ফাউন্ডেশনের মধ্যে চুক্তি
শীঘ্রই বাজারে আসছে টেকনো ক্যামন ৩০ সিরিজের ফোন
বাংলাদেশের বাজারে আসছে অনার ম্যাজিক ৬ প্রো
হজযাত্রীদের হেলথ চেকআপে বিকাশ পেমেন্টে ১০০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয়
এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট আলাদা করবে টিকটক
ফ্রন্টেক লিমিটেড এবং অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
বাংলাদেশ এআই অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত
মিরপুর ও এলিফ্যান্ট রোডে ৯৭৭টি অবৈধ স্মার্ট টিভি বক্স ও সেট টপবক্স জব্দ
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য বাজেটে ৫’শ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব পলকের
শেষ হল যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতা ২০২৪